বই মানুষের মেধা বিকশিত করে, বই একটি জাতির পরম বন্ধু। সেই বইয়ের সেবক সেজে কতিপয় ধান্ধাবাজ কুচক্রী ব্যক্তি করছে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম। সম্মিলিত লেখক সমাজ এর আয়োজনে বিভাগীয় প্রসাশনের সহযোগিতায় হচ্ছে এসব। এবারের রংপুর মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩৫ টি প্রকাশনী এসেছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার ভাষ্যমতে জমজমাট মেলা বলে চালানো হলেও আসলে স্টলে বসা সেলস ম্যানেরা মশার কামড় ছাড়া আর কিছুই উপভোগ করেন নি। কয়েকটি স্থানীয় ও কিছু জাতীয় দৈনিকের ছবি দেখে হয়ত বোঝা যাচ্ছে জমজমাট মেলা কিন্তু ওসব দর্শক বা পাঠক বৃন্দ হলেন তারা যাদেরকে সারা মেলার মাঠ থেকে ধরে এনে ফটো সাংবাদিক ছবি তুলছেন নিউজ করার জন্যে। সারস প্রকাশনীসহ অন্যান্য প্রকাশনী ১৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত মোট বিক্রি ১০ হাজার টাকা করতে পারেন নি। অথচ ৩১ মার্চ হলেই তাদের প্রত্যেককে গুণতে হবে ৫ হাজার টাকা স্টল ভাড়া। ৩৫ টি স্টল থেকে মোট টাকা আসবে এক লক্ষ পঁচাত্তর হাজার, এছাড়াও বিভাগীয় প্রসাশন এবং বিভিন্ন মানবকল্যাণ মূলক সংগঠন থেকে মেলা কমিটি টাকা নিয়েছে বলে সত্যতা পাওয়া গেছে। সুদূর ঢাকা থেকে রংপুরে গিয়ে হোটেল ভাড়া, খাবারসহ অন্যান্য যাবতীয় খরচ দিয়ে প্রত্যেক প্রকাশনীই লোকসান গুণতে বাধ্য।
মেলার ৩৫ টি স্টলের প্রায় প্রত্যেক স্টলেই রয়েছে দুই একজন নারী। অথচ বইমেলায় নেই কোনো ওয়াসরুম, টয়েলেট। বেলা ৩ টা থেকে রাত ৯ টা অবধি কীভাবে মানুষ প্রকৃতির ঢাক ছাড়া থাকতে পারে? মেলা কমিটিকে বারবার বলা হলেও এ বিষয়ে তারা কর্ণপাত করেন নি বরং তারা পাশের সংস্কৃতি ভবন দেখিয়ে দিতেন। সেখানে গিয়ে কয়েকজন রীতিমত অপমানিত হয়েছেন বলে সত্যতা পাওয়া গেছে।
গত ২৮ তারিখ ঢাকা থেকে আগত সারস প্রকাশনী রংপুর বইমেলা বয়কট করেছে ঘৃণ্য কুটনৈতিক কারণে। প্রকাশনীর মালিক হোসাইন মোহাম্মদ মিরাজের সাথে কথা বললে জানা যায় রংপুরের কবি রেজাউল করীম জীবন এর ‘ছড়া গুলো টুনটুনির’ নামক বইটি প্রকাশ করে সারস প্রকাশনী। লেখক সম্পূর্ণ টাকা না দিলেও চাপ প্রয়োগ করে বইটি করাতে বাধ্য করে লেখক। তিনি রংপুর বইমেলার সদস্য সচিব। গত ২৮ তারিখ সন্ধ্যায় জীবন এসে বললেন তার বইটি মৌচাকে বিক্রি হবে কিন্তু প্রকাশনীর আইন অনুযায়ী প্রকাশক না দিতে চাইলে কথা কাটা-কাটি হয়। তখন রংপুর বইমেলার ২৬ নং স্টল তথা সারস প্রকাশনীর স্টলের দায়িত্বে থাকা সাইফ এর সাথে রংপুরের ছড়াকার সাঈদ সাহেদুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমানের সাথেও কথা কাটা কাটি হয়। যখন প্রভাব প্রতিপত্তে সারস প্রকাশনীর মালিক হোসাইন মোহাম্মদ মিরাজ রেজাউল করীম জীবন, সাঈদ সাহেদুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমানের সাথে পেরে উঠছিলেন না তখন প্রকাশনীর মালিক সাইফকে মোবাইলে জানান সে যেন রেজাউল করীম জীবনের বইটি তাকে বুঝিয়ে দিয়ে স্টল বন্ধ করে চলে আসে। কথামত সাইফ স্টল বন্ধ করে ঢাকা চলে যায়।
প্রকাশনীর মালিক মিরাজের তথ্য মতে রংপুর বইমেলায় সারস প্রকাশনীর প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। উল্লেখ্য সাঈদ সাহেদুল ইসলামের ছড়ার বই ‘সত্য ভূতে পথ্য ছড়া’ প্রকাশনীর খরচে এসেছে এবং মতিয়ার রহমানের ছড়ার বই ‘খুঁজে ফিরি সেই দিন’ এর টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখনও পর্যন্ত এক টাকাও দেন নি।
বাংলাদেশে একটা কথা আছে যে প্রকাশনী নিজ খরচে নতুন লেখকের বই করে না কিন্তু সে কথাকে অবজ্ঞা করে সারস প্রকাশনী যখন নিজ খরচে বই করল তখন যদি হয় এই ঘৃণ্য কুটনীতি তখন প্রকাশকরা কী করবে? এমন প্রশ্নই রেখেছেন প্রকাশনীর মালিক হোসাইন মোহাম্মদ মিরাজ।
লক্ষ টাকা বাণিজ্যের সাথে জড়িয়ে আছে রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিকরা সে কারণবশত কোনো সাংবাদিক এ বিষয়ে নিউজ করতে রাজি হননি বলেও অভিযোগ করেছেন সাইফ।
প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মেলা কমিটি আত্মসাৎ করবে রংপুর বইমেলা থেকে। এ ব্যাপারে দেশের সুশীল সমাজ ও প্রসাশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে স্টলগুলোর মালিকবৃন্দ।
বিশেষ প্রতিনিধি,